Thursday, September 20, 2012

সয়াবিন একটি উৎকৃষ্ট খাবার

প্রায় ৫০০০ বছর পূর্বে সুস্বাদু বাদামের আস্বাদ বিশিষ্ট সয়াবিন চিন দেশে প্রথম আবাদ শুরু হয় এবং তখন থেকেই সয়াবিন চিনা খাবারের একটা অবিচ্ছেদ্ধ অংশ। দেখা যায়, পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশ থেকে চিনাদের গড় আয়ু বেশী। স্বাস্থ্য মাঝারি ধরনের সাধারনত তাদের বৃদ্ধ বয়সেও চুল পড়ে যায় না, প্রখর বুদ্ধি সম্পন্ন এবং কঠোর পরিশ্রমী। গবেষনায় দেখা গেছে, খাদ্য তালিকায় সয়াবিন আছে বলেই জাতিগতভাবে তারা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী।
সয়াবিন ৫০০০ বছর পূর্বে চীনে চাষ শুরু হলেও এর বিস্তার ঘটে আরও অনেক বছর পর জাপানে এরপর কোরিয়ায়, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, বার্মা, ইন্ডিয়ায় সয়াবিন মূলত: চীন, জাপান, কোরিয়ানদের খাদ্য তালিকার একটা প্রধান অংশ। পশ্চিমা বিশ্বে সয়াবিনের বিশেষ গুনের কথা প্রায় অজানাই ছিল। ১৯ শতকের গোড়ার দিকে আমেরিকায় সয়াবিনের চাষ শুরু হয় মূলত গো খাদ্য হিসাবে। এরপর ১৯০৪ সালে কৃষিমন্ত্রণালয় সয়াবিনের উপর ব্যপক গবেষনা শুরু করে। বিখ্যাত বিজ্ঞানী ডা:জি.ডব্লিউ. কারভার আবিষ্কার করেন সয়াবিনের সব অসাধারন উপাদান যা স্বাস্থ্য রক্ষার জন্যে অতীব জরুরী এবং এটাও প্রমান করে, সয়াবিন সমস্ত খাবারের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ এবং উৎকৃষ্ট মানের উদ্ভিজ খাদ্য এবং স্বাস্থকর উদ্ভিজ তেলের আধার।

কি আছে সয়াবিনে (১০০ গ্রাম)
  •    প্রোটিন (আমিষ)     - ১১ গ্রা.
  •    তেল            - ৫.৮ গ্রা.
  •    শ্বেতসার        - ১০ গ্রা.
  •    ভিটামিন এ        - ১৪০ আই ইউ
  •    ভিটামিন বি        - ০.২৩ এমজি
  •    ভিটামিন বি২        - ০.১৪ এমজি
  •    নিয়াসিন        - ১.১ এমজি
  •    ভিটামিন সি        - ১৫ এমজি
  •   ক্যালসিয়াম        - ১৩১ এমজি
  •    ফসফরাস        - ১৪২ এমজি
  •     লৌহ        - ২.২৫ এমজি

এছাড়াও সয়াবিনে আছে
  •   প্রচুর খাদ্য উপযোগী আঁশ
  •    প্রচুর প্রোটিন (আমিষ)
  •    স্বল্প মাত্রায় উদ্ভিজ তেল
  •   কোলেষ্টরেলমুক্ত
  •   ল্যাকটোজমুক্ত
  •  ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ
  •  প্রচুর ফাইটোএসট্রোজেন (উদ্ভিজ এসট্রোজেন) সমৃদ্ধ।


উপরি উল্লেখিত উৎকৃষ্ট মানের উপাদানগুলি আছে বলেই আাজ সর্বমহলে সয়াবিন প্রবলভাবে সমাদৃত। সয়াবিন দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য তৈরি হচ্ছে। যেমন-সয়াসস, সয়াময়দা, সয়াদুধ, সয়াদই, সয়াপনির ইত্যাদি। এখনও এর উপর গবেষণা চলছে এবং এর সমাদর দিন দিন বেড়েই চলেছে। প্রচার, প্রচারণার অভাবে বাংলাদেশে এখনও এর উপকারিতা এবং ব্যবহারিক পদ্ধতি সাধারণ মানুষের কাছে অজানা রয়ে গেছে। এই সয়াবিন গরীব জনসাধারণের জন্যে সাশ্রয়ী মূল্যের প্রোটিন। তবে আনন্দের বিষয় এই যে, বর্তমানে নোয়াখালীর ভাটি অঞ্চলে কিছু কিছু চাষ শুরু হয়েছে এবং এর উৎপাদন স্থানীয় বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।

সয়াবিনের উপকারীতা
  •     উৎকৃষ্ট মানের আমিষ যা মাছ ও মাংসের বিকল্প
  •     নিয়মিত সয়াবিন খেলে হালকা পাতলা থাকা যায়
  •     সয়াবিন উচ্চ রক্তচাপ এবং কোলেষ্টরেল কমায়
  •     সয়াবিন সিদ্ধ খেলে উচ্চ কোলেষ্টোরেল অল্প দিনের মধ্যে কমে যায় এবং  হ্রৎপিন্ড রক্ষক হিসাবে কাজ করে।
  •     মেনোপজ পরবর্তী সময় সয়াবিন মেয়েদের নানা রকম উপসর্গ যেমন হট ফ্লাস, হাড় ক্ষয় হওয়া, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া এবং রক্তের লিপিড বৃদ্ধি (এল ডি এল) থেকে রক্ষা করে
  •    মেয়েদের মেনোপজ পরবর্তী সময়ে ব্রেষ্ট ক্যানসার হওয়ার প্রবণতা থেকে রক্ষা করে।
  •     সয়াবিন রক্তে শর্করার (সুগার) পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে বলে ডায়াবেটিক থেকে রক্ষা করে।
  •     সয়াবিন ডায়াবেটিক জনিত কিডনি এবং হার্ট ডিজিজ হতে রক্ষা করে।
  •     সয়াবিন প্রষ্টেট গ্রন্থির ক্যানসার হওয়া থেকে রক্ষা করে।
  •     সয়াবিন পাকস্থলীর কার্যক্রমকে শক্তিশালী করে।
  •     সয়াবিন কোষ্ঠবদ্ধতা দূর করে
  •     সয়াবিন সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন করে
  •    সয়াবিন মেনোপজ পরবর্তী সময়ে হিপ (পাছার) হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার প্রবনতা থেকে রক্ষা করে
  •     সয়াবিন হতে প্রস্তুতকৃত নানারকম খাদ্য দ্রব্যের গ্রহণের পরিবর্তে সরাসরি এর বীজ খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করলে সর্বোচ্চ উপকার পাওয়া যায়।

সয়াবীজ যেভাবে খেতে হয়
প্রণালী:
সয়াবিন একটি পাত্রে পানি সমেত ৫ মিনিট গরম করতে হবে। চুলা থেকে পাত্রটি নামিয়ে মুখ বন্ধ করে ২ ঘন্টা রাখতে হবে। অথবা সয়াবীজ একরাত বা ৮ ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে ফ্রিজে রাখতে হবে যাতে করে সয়াবীজ গেজিয়ে না যায়। রান্না করার পূর্বে ভিজানো পানি ফেলে দিয়ে নতুন পানি দিয়ে সিদ্ধ করতে হবে।
সয়াবীজ সিদ্ধ করার জন্যে দুই রকম পদ্ধতি অবলম্বন করা যায়-(১) যে কোন পাত্রে চুলায় সরাসরি সিদ্ধ করা যায় এতে সাধারনত দেড় ঘন্টা সময় লাগবে এ সময় যদি ফেনা উঠে তা চামচ দিয়ে ফেলে দিলেই চলবে। (২) প্রেসার কুকারে সিদ্ধ করা যায়। এতে ৪৫ মিনিট সময় লাগবে। যেভাবেই সিদ্ধ করা হউক না কেন সয়াবীজ ভর্তা করে অথবা ডালের মত রান্না করে ভাত কিংবা রুটির সঙ্গে খাওয়া যায়। সয়াবিন থেকে উপরে বর্নিত উপকারগুলি পেতে হলে প্রতিদিন নিয়মিত কমপক্ষে ৫০-৭৫ গ্রাম খেতে হবে। এটা নিশ্চিত করতে দিনে অন্তত দুইবার সয়াবিন এর দুধ অথবা  উপরে বর্নিত নিয়মে সয়াবিন খেতে হবে।

সয়াবিন থেকে দুধ প্রস্তুত করার প্রণালী
আধা চা চামচ খাওয়ার সোডা দিয়ে গরম পানিতে সয়াবীজ ৩/৪ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। পানি ঝরিয়ে বীজের উপরের খোসা পরিষ্কার করে ব্লেন্ডার মেশিনে ভালমত ব্লেন্ড করতে হবে যাতে সয়াবীজগুলি পেষ্ট হয়ে যায়।

যত কাপ সয়াবীজ দুধ তৈরি করার জন্যে ব্লেন্ড করা হল তার তিনগুন পানি মিশিয়ে ১৫/২০ মিনিট জ্বাল দিতে হবে। এরপর নামিয়ে মোটামুটি ঠান্ডা হলে কাপড়ের ছাকনি দিয়ে ছেকে দুধ বার করে নিতে হবে।
এই দুধ আবার জ্বাল দিতে হবে এবং এটা একটু চিনি / মধু মিশিয়ে খাওয়া যাবে অথবা এটা দিয়ে দই প্রস্তুত করেও খাওয়া যাবে।