Friday, November 23, 2012

অনিদ্রা


অনিদ্রা রোগ বর্তমানে শহুরে ব্যস্ত এবং উচ্চ শ্রেণীর মানুষের মধ্যে বেশী পরিলক্ষিত হয়। রোগ এতই ব্যাপক যে স্বল্প ডোজের ঘুমের ঔষধে কাজ না হওয়ায় পর্যায়ক্রমে ভোজের মাত্রা বাড়িয়ে ঘুম কিনে নেওয়ার মত ঘটনা অহরহ ঘটছে। এই অনিদ্রা শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম হরণ করে।  ফলে দেহের সমস্ত অর্গান এর উপর চাপের সৃষ্টি হয় এবং দেহের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হয়।

ঘুম শরীরের জন্যে অত্যাবশ্যক বিশ্রাম। যেটা দৈনন্দিন কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে সারাদিন ঘুম ঘুম ভাব এবং ক্লান্তি অনুভ’ত হয়। ঘুম মানুষকে টেনসন মুক্ত করে মস্তিস্ক ও শরীর শান্ত এবং সজীব রাখে। ঘুমের মাত্র্ াএবং সময় মানুষে মানুষে ভিন্ন হতে পারে, তবে প্রায় মানুষের ৬-৮ ঘন্টা ঘুম স্বাভাবিকভাবে দেহ পরিচালনার জন্য যথেষ্ট।

অনিদ্রা বা কম ঘুম সাধারণত বয়স্ক মানুষের মধ্যে পরিলক্ষিত হয় এবং রাতে ২/৩ বার ঘুম ভাঙ্গার ঘটনা ঘটতে পারে। ১২ বৎসরের ছেলে মেয়েদের দিন রাতে ৯ ঘন্টা ঘুম দরকার যেটা বয়স ২০ বৎসর হলে ৮ ঘন্টায় নেমে আসে। ৪০ বৎসরে ৭ ঘন্টা এবং ৬০ বৎসর হলে ৬ ঘন্টা ঘুম স্বাভাবিক। এর ব্যতিক্রম হলে এবং চলতে থাকলে দেহের রাসায়ণিক ক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে নানা রকম রোগের সৃষ্টি করতে পারে।

লক্ষন :
ঘুমের অস্বাভাবিক পরিবর্তন, পরিমিত সময় পর্যন্ত ঘুম না হওয়া, স্মরণ শক্তি হ্রাস পাওয়া, ঘুমের নির্ধারিত কোন সময় না থাকা, আবেগ অনুভূতির পরিবর্তন হওয়া বা কমে যাওয়া। দেহের অভ্যন্তরীন কার্যক্রম স্বাভাবিক না থাকা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে দ্বিধাগ্রস্ত হওয়া।










কারন :
অনিদ্রার প্রধান কারণ মানসিক চাপ, দু:শ্চিন্তা, ভয়, অতিরিক্ত উত্তেজনা, রাগ এবং মাত্রাতিরিক্ত হিংসাপরায়নতা। এছাড়া ধুমপান কোষ্ঠবদ্ধতা, রাতে মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া দাওয়া করা, অতিরিক্ত চা ও কফি পান করা এবং অভুক্ত অবস্থায় রাতে ঘুমাতে যাওয়া এছাড়া অনিদ্রা নিয়ে দু:শ্চিন্তা করলেও ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে।

নিরাময়:
এর থেকে পরিত্রান পেতে হলে প্রথমেই জানতে ঘুম সৃষ্টি হয় কিভাবে এবং স্থায়ীকাল কিভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। আমরা জানি মানব দেহে দুই ধরনের গ্লান্ড্ বা গ্রন্থি আছে। যেমন-এনড্রোক্রাইন বা নালী বিহীন গ্রন্থি এবং এক্সোক্রাইন বা নালীযুক্ত গ্রন্থি। এনড্রোক্রাইন গ্রন্থি আছে দশ ধরনের দেহের দশ জায়গায় অবস্থিত। যাদের প্রধান কাজ শরীরের বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমানে হরমোন নি:সরন করা  এবং  এক্সোক্রাইন গ্রন্থি আছে পাঁচ প্রকার যার প্রধান কাজ শরীর থেকে অপ্রয়োজনীয় পানি বা পানিয় দ্রব্য শরীর থেকে বার করে দেয়ার জন্য সদা নিয়োজিত থাকা। দেহের প্রতিটি এনড্রোক্রাইন গ্রন্থি শরীরের প্রতি মুহুর্তের রাসায়নিক কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে। ঘুমে আছন্ন হয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া এবং ঘুম থেকে স্বয়ংক্রীয়ভাবে জেগে ওঠার কাজটা দেহের যে গ্রন্থি করে থাকে তার নাম পিনিয়াল গ্রন্থি যাকে বিজ্ঞানীগণ নাম দিয়েছে তৃতীয় নয়ন হিসাবে। কারন এই গ্রন্থি আলোতে সংবেদনশীল। এই গ্রন্থি এক ধরনের হরমোন নি:স্বরন করে যাকে বলা হয় মেলাটোনিন। এই মেলাটোনিন নি:স্বরন হওয়ার সাথে সাথে দেহের মধ্যে এক ধরনের রাসায়নিক ক্রিয়া শুরু হয় তখন মানুষ ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। এই গ্রন্থিটি অন্ধকারে ক্রিয়াশীল। সাধারত সন্ধ্যা হওয়ার পর থেকে এর নি:সবণ শুরু হয় যা ভোরের আলো না দেখা পর্যন্ত চলতে থাকে। ভোরের আলো দেখামাত্র এর নি:স্বরন বন্ধ হয়ে যায় তখন ঘুমন্ত মানুষ সয়ংক্রিয়ভাবে জেগে ওঠে। শহুরে মানুষ এবং গ্রামের মানুষের ঘুমের মধ্যে অনেক তফাৎ দেখা যায়। যেমন-শহুরে মানুষ অনেক রাত পর্যন্ত জেগে টিভি দেখে বা বই পড়ে যার কারনে তাদের পিনিয়াল গ্রন্থি আলোর কারনে ক্রিয়াশীল হতে পারে না।  পক্ষান্তরে গ্রামের মানুষেরা সন্ধ্যায় অন্ধকার হয়ে আসলে তাদের পিনিয়াল গ্রন্থি থেকে মেলাটোনিন হরমোন নি:স্বরন হতে শুরু করে এবং তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যায়। শেষ রাতে ভোরের আলো দেখা গেলেই পিনিয়ালের নি:স্বরন বন্ধ হয়ে যায় এবং ঘুমন্ত মানুষ এমনিতেই জেগে যায়। এটাকেই বলে নিদ্রার দেহ ঘড়ি।  একবার যদি আপনার দেহ ঘড়ির কার্য্যকারীতা কমে যায় তখন ঘুম আসার জন্য আপনার ভিতর অস্থিরতা দেখা দেবে এবং মানসিক চাপের সৃষ্টি হবে। এর থেকে পরিত্রান পেতে অনিদ্রা আক্রান্ত ব্যাক্তি ঘুমের পিলের দায়স্থ হয়। এভাবে আক্রান্ত ব্যাক্তি ঘুমের পিলের প্রতি নির্ভর করতে থাকে এবং অভ্যস্থ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় শরীরে নানা রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।

যেমন ঠিকমত হজম না হওয়া, চামড়ার উপর র‌্যাশ দেখা দেওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, শ্বাসতন্ত্রের কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়া, ক্ষুধামন্দা দেখা দেওয়া, কিডনি, লিভার এক কার্যক্ষমতার উপর চাপের সৃষ্টি করে নানারকম রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়া এবং রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া।

এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে প্রথমেই ঘুমের সময় নির্ধারণ করতে হবে। ঘুম না আসলেও প্রতি রাতে নির্ধারিত সময়ে ঘুমের পরিবেশ তৈরি করে বিছানায় যেতে হবে এবং ভোরে নির্ধারিত সময়ে বিছানা ছেড়ে উঠতে হবে। এটা করতে থাকলে কিছুদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক ঘুম হবে। মনে রাখতে হবে, শেষ রাতের ৪ ঘন্টা অপেক্ষা মধ্যরাতের পূর্বে ২ ঘন্টা গভীর ঘুম দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। প্রথম রাতে অফিসিয়াল কাজ কিংবা টিভি দেখে মধ্যরাতের পরে ঘুমাতে যারা অভ্যস্ত তাদের দেহ সুস্থ থাকে না।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ক্রমাগত অনিদ্রায় ভোগে এবং ঘুমের পিল খায় তাদের দেহে প্রয়োজনীয় ভিটামিন (বি কমপ্লেক্স, সি এবং ডি ভিটামিন) এবং মিনারেল (ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়াম  এবং জিঙ্ক) এর ঘাটতি দেখা দেয়, এবং ঘুম আসার ম্যাকানিজম এর কার্যকারিতা হ্রাস পায়। ফলে দেহের স্বাভাবিক কার্য্যক্রম ব্যাহত হয়। একটা সাধারণ ডায়েটকে কিছুটা পরিবর্তন করে শরীরের উপযোগী করে খাওয়া শুরু করলে কিছু দিনের মধ্যেই অনিদ্রার রাহুগ্রাস থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এজন্যে খাবারের মধ্যে অবশ্যই সাদা ময়দা এবং এর দ্বারা প্রস্তুত খাবার, সাদা চিনি দিয়ে যে কোন খাবার, চা, কফি, চকলেট, কোলাপানীয়, মদজাতীয় পানীয়, তৈলাক্ত এবং তেলে ভাজা খাবার, প্রিজারভেটিভ এবং রং দেওয়া খাবার এবং বেশী লবনাক্ত খাবার মেনু থেকে বাদ দিতে হবে।

প্রচলিত খাবারগুলি একটুখানি পরিবর্তণ করে নি¤েœর খাবারগুলি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুললে দ্রুত সুফল পাওয়া যাবে।

সকালের নাস্তা - খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানিতে এক চা চামচ লেবুর রস দিয়ে খেতে হবে। এর আধা ঘন্টা
পর যে কোন একটা মৌসুমী রসাল ফল। পরে নাস্তায়  ভ’ষিসমেত আটার রুটি বা খই সঙ্গে ঘরে
পাতা টক দই এবং আখের গুড়।
বেলা ১১-১২ টা - যে কোন একটা ফল।
দুপুর - ভাত, শাকসবজি, মুগের ডাল, সয়াবিন ভর্তা  শেষে ঘরে পাতা টক দই আধা কাপ।
রাতে - সবজি, সালাদ, রুটি এবং এক টুকরা মাছ / মুরগী
শোবার পূর্বে - এক কাপ গরম দুধ ডায়াবেটিকস না থাকলে ১৫/২০ টা কিসমিস সহ খেতে হবে।

এছাড়া শোবার ঘরটা হতে হবে সুন্দর পরিপাটি । ঘর সম্পূর্ন অন্ধকার করে নিতে হবে যাতে পিনিয়াল গ্রন্থির হরমোন নি:স্বরন বাধাগ্রস্থ না হয়। শোয়ার সময় দিনের কার্যক্রমের চিন্তা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। চিৎ হয়ে না শুয়ে যে কোন এক পাশ হয়ে শুলে কিছুক্ষন এর মধ্যেই ঘুম আসবে। ঘুমানোর পূর্বে কিছুক্ষন নি:শ্বাস প্রস্বাশের ব্যায়াম করলে ঘুম আসতে সাহায্য করে। তাছাড়া রাতের খাওয়ার পর ১৫-২০ মি: হাটলে ঘুমের বড়ি খাওয়ার মত অনুভুতি পাওয়া যায়।

নিয়মিত স্বাস্থ্য চর্চা যেমন ভোরে হাঁটা কিংবা যোগ ব্যায়াম, রাতে নি:শ্বাস নিয়ন্ত্রনের ব্যায়াম এবং রাতের খাওয়ার পর ১৫/২০ মি: হাটলে অনিদ্রা রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কাজ থেকে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে গরম পানিতে পা দুটি ডুবিয়ে ১৫ মি: থাকলে শরীরের অবসাদ অনেকটা কমে যায়।

রাতে শোয়ার পূর্বে দুই পায়ের তলায় রসুন তেল কিছুক্ষণ মালিশ করে কুসুম গরম পানিতে গোসল করে ঘুমাতে গেলে ভাল ঘুম হয়।

এছাড়া চেষ্টা করতে হবে যেন সবসময় প্রফুল্ল চিত্তে টেনশনমুক্ত দিন অতিবাহিত করা যায়। যদিও বর্তমান সময়ে এটা বেশ কঠিন তবুও চেষ্টা করতে কোন ক্ষতি নেই। হয়ত চেষ্টা করতে করতে মনের এবং শরীরের নিয়ন্ত্রণ এমনিতেই এসে যাবে।


Thursday, November 1, 2012

গ্যানোডার্মা লুসিডামগ্যানোডার্মা লুসিডাম।।সর্বশ্রেষ্ঠ ঔষধী মাশরুম

গ্যানোডার্মা লুসিডামগ্যানোডার্মা লুসিডাম

সর্বশ্রেষ্ঠ ঔষধী মাশরুম

গ্যানোডার্মা কি ? 

গ্যানোডার্মা এক ধরনের ছত্রাকের বোটানিক্যাল নাম। এটা সাধারনত ঔষধী মাশরুম হিসাবে প্রাচীনকাল থেকে পরিচিত এবং ব্যবহৃত হচ্ছে। এর বিরল ঔষধী গুণের কারণে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীগণ অত্যন্ত আগ্রহের সাথে গ্যানোডার্মা মাশরুমের উপর গবেষণা অব্যাহত রেখেছে। আমাদের দেশে এই মাশরুম লালচে রং এর মাশরুম হিসাবে পরিচিত। চীন দেশে এটাকে লিংঝি এবং জাপানে ঋষি মাশরুম বলে বহুল পরিচিত। এটা সাধারণত কাঠের গুড়ি এবং অনেক পুরান গাছে জন্মগ্রহণ করে। ঔষধী গুণের কারণে কোন কোন দেশে এর চাহিদা আকাশ চুম্বি বিধায় এটা টিসু কালচার পদ্ধতিতে বানিজ্যিকভাবে চায়না, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া এবং আমেরিকা সহ অনেক দেশে এর উৎপাদন এবং বিপনন হচ্ছে।
অধুনা বাংলাদেশে একমাত্র প্রতিষ্ঠান এ. কে এগ্রো কৃতিত্বের সঙ্গে গ্যানোডার্মা লুসিডাম লালচে প্রজাতির মাশরুম উৎপাদন করে চা হিসাবে বিপনন শুরু করেছে।

ইতিহাস:

গ্যানোডার্মার ইতিহাস ৫০০০ হাজার বছরের প্রাচীন। সেই আদিকাল থেকে চীন দেশের সম্রাট / রাজাগন এটাকে অলৌকিক ঔষধী ছত্রাক বা দ্রব্য বলে বিবেচনা করে এর নাম প্যান্যাসিয়া (সর্ব রোগের ঔষধ) হিসাবে গণ্য করত। পরবর্তীতে পশ্চিমা দেশগুলো এর নামকরণ করে এশিয়ার অলৌকিক ইস্টার মাশরুম। 

প্রাচীন নথিপত্র থেকে জানা যায় চীন দেশের সম্রাটদের প্যালেসের লোকজনের জন্যই শুধু এর ব্যবহার হত। পরবর্তীতে ঔষধী গুণের কারনে এর চাষ সমপ্রসারণ হতে থাকে। প্রাচীন কালের নথি থেকে জানা যায় একজন চায়নীজ লোক যার বয়স ১০০ বছরের বেশী অথচ মুখখানা দেখতে যুবক ছেলের মত। অনুসন্ধানে দেখা যায় সেই লোক গ্যানোডার্মা নিয়মিত ব্যবহার করে ১০০ বছর পর্যন্ত চির সবুজ রাখতে সক্ষম হয়ে ছিল। আরেকটি নথি থেকে পাওয়া যায় খ্রীষ্ট্রপূর্ব ১১ সালে পেংসু নামক এক চীনা ভদ্রলোক ৯০০ বছর বেঁচে ছিলেন এবং তার জীবনে ১০০ টা নারীকে বিয়ে করেছিলেন। ঐ সময়ে গ্যানোডার্মাকে  সৌভাগ্য এবং অমরত্বের প্রতিক হিসাবে গণ্য করা হত।

এছাড়া প্রাচীন চায়না বই থেকে জানা যায় গ্যানোডার্মা লুসিডিয়াম কে জিনসেং থেকেও উৎকৃষ্ট হার্ব হিসাবে গণ্য করা হয়েছিল। খ্রীষ্ট্রপূর্ব ২০০ সালে মিং ডাইনেষ্টি (১৩৬৪-১৬৪৪) সময়ে একজন বিখ্যাত চিকিৎসক লিসিঝেন তার রচিত বইয়ে উল্লেখ করেছেন গ্যানোডার্মা লুসিডাম স্বাস্থ্য রক্ষায় একটা সর্বোচ্চ ঔষধী গুণ সম্পন্ন ছত্রাক।  তার লেখা বইখানা ঐ সময়ের অধিক বুদ্ধি সম্পন্ন চায়নিজ হারবাল বই হিসাবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে ১৯৭০ সালে পশ্চিমা দেশে এই গ্যানোডার্মা লুসিডামকে গবেষনার আওতায় আনা হয়। ১৯৭২ সালে জাপান এর চাষ এবং ব্যবহার শুরু করে। এর পর থেকে সারা পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশে এর গবেষনা এবং ব্যবহার শুরু হয় যা উত্তর উত্তর বেড়েই চলেছে।

কি কারনে গ্যানোডার্মা এত সমাদৃত: 

এ যাবত হাজার হাজার প্রজাতির খাদ্য উপযোগী মাশরুম আবিষ্কৃত হয়েছে। যার প্রায় প্রত্যেক প্রজাতিতেই স্বাস্থ রক্ষায় সব রকম রাসায়নিক উপাদান সমৃদ্ধ। তবে গ্যানোডার্মার মত এত ঔষধী গুণ সম্পন্ন মাশরুম আর পাওয়া যায় নাই এবং এর বহুমূখী ব্যবহারের প্রাচীন ইতিহাস আছে বলে গ্যানোডার্মা মাশরুম পৃথিবীতে আদিকাল থেকেই এত সমাদৃত।

সক্রীয় উপাদান :

গ্যানোডার্মা জাপানে এবং চায়নায় এটা সাধারণত স্বাস্থ্যবান মানুষ রোগ প্রতিষেধক হিসাবে খেয়ে থাকলেও এই মাশরুম নানা রকম রোগের ঔষধ হিসাবে ব্যবহার হচ্ছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য এলার্জি, বাত, ব্রংকাইটিস, গ্যাষ্ট্রিক, আলসার, রক্তচাপ, জন্ডিস, অনিদ্রা, ক্যানসার, টিউমার, কোষ্ঠকাঠিন্য, পুরুষত্বহীনতা, স্নায়ুর দুর্বলতা, ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা, ওজন বেড়ে যাওয়া, দুর্বল রক্ত সঞ্চালন, ডায়াবেটিক, অর্শ, দুর্বল স্মৃতি শক্তি ইত্যাদি। এছাড়া শরীর টক্সিনমুক্ত করার ক্ষমতা অপরিসীম।

দেহ পরিচালনার জন্যে প্রায় ২০০ রকমের সহায়ক উপাদান এই গ্যানোতে বিদ্যমান। নিম্নে উল্লেখযোগ্য সক্রীয় উপাদানের নাম এবং এর কার্যক্ষমতা দেওয়া হল।

(০১)পলিস্যাকরাইড্স:

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে রক্তে চিনির পরিমানকে স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখে ;
  • মাংস পেশীর কোষ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে শরীরে উৎপন্ন টক্সিন মুক্ত করতে সাহায্য করে।

(০২) অর্গানিক জারমেনিয়াম:

  • রক্তে অক্সিজেনের পরিমান বাড়িয়ে দেয় এবং মুক্ত অক্সিজেন রেডিকেল্স দেহের ক্ষতি করার ক্ষমতা হ্রাস করে ;
  • ক্যানসার কোষ ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে।

(০৩)অ্যাডেনোসিন

  • রক্তে চর্বি এবং কোলেষ্টোরেলের মাত্রা কমিয়ে দেয় ;
  • রক্ত চলাচলকে নির্বিঘ করে ;
  • হজম প্রক্রিয়াকে সাবলিল করে ;
  • রক্তের Platelets সংখ্যা সব সময় বৃদ্ধি করতে থাকে যাতে সহজে রক্ত চলাচল  নিশ্চিত হতে পারে।

(০৪) ট্রাইটারপেনয়েড্স

  • হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে ;
  • এলার্জির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে ;
  • রক্তে কোলেষ্টোরেল এবং চর্বি কমাতে সাহায্য করে।

(০৫) গ্যানোডারিক এসেন্স 

  • চর্ম রোগ সারাতে সাহায্য করে ; 
  • চামড়ার উজ্জলতা এবং কমনীয়তা বৃদ্ধি করে।

(০৬)হাইড্রোক্সিএসিটিক এসিড (এইচ সি এইচ):

  • শরীরে অতিরিক্ত চর্বি জমতে বাধা দেয় ;
  • খাবারের রুচি স্বাভাবিক করে।

(০৭)টংগাট আলি একটিভ ইনগ্রিয়েন্ট:

  • রক্ত চলাচল নির্বিঘ করে ;
  • নার্ভাস তন্ত্রে কোন বিঘ ঘটলে তা সারিয়ে তোলে ;
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সুরক্ষিত করে ;
  • অরুচিকে সুদ্ধ করে এবং হজম শক্তি বাড়ায় ;
  • দেহের অক্লান্ত কর্ম শক্তির যোগান দেয় ;

(০৮)ভিটামিন:

  • শরীরের সুস্থতার  সামঞ্জস্য রাখে।

(০৯) গ্যানোডার্মা লুসিডাম একটিভ ইনগ্রিয়েন্ট্স: 

  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায় ;
  • শরীরের কর্মশক্তি পুনরুজ্জীবিত করে। 
  • হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করে; 
  • এলার্জি প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।

(১০) এন্টিওক্সিড্যান্টস:

  • গ্যানোডার্মা লুসিডাম পেপটাইড সমুহ মাশরুমটির উচ্চমাত্রার অ্যান্টি অক্সিজেন্ট সুবিধা দিয়ে থাকে। দেহের বিভিন্ন জৈবিক  প্রক্রিয়ায় অনবরত সৃষ্টি এবং ক্ষয় প্রক্রিয়া চলমান। বয়:বৃদ্ধির সাথে সাথে সৃষ্টির চেয়ে ক্ষয় তরান্বিত হয়। গ্যানোডার্মা অ্যান্টি অক্সিজেন্ট সমুহ দেহের এই ক্ষয় পূরণ করে দেহের শারিরীক এবং জৈবিক প্রক্রিয়া সতেজ করে।

(১১) মিনারেল:

  • শরীরে বিভিন্ন পর্যায়ে রাসায়নিক প্রক্রিয়া ত্বরান্নিত করে সুস্থ্যতা নিশ্চিত করে।
অবিশ্বাস্য মনে হলেও গ্যানোডার্মা মাশরুমে কমপক্ষে ৪০০ রকমের আলাদা আলাদা জৈব যৌগিক উপাদান বিদ্যমান। পৃথিবীর বিজ্ঞানীগণ অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে গবেষণা করে এ পর্যন্ত ৩০০ প্রকারের জৈব উপাদান আবিষ্কার করে ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছেন।

এই ৩০০ প্রকার জৈব উপাদানের মধ্যে ৫ শ্রেণীর উপাদান উল্লেখযোগ্য যেমন-পলিস্যাকরাইড্স, ট্রাইটারপেনয়েড্স, অর্গানিক জারমেনিয়াম, অ্যাডনোসিন এবং গ্যানোডারিক এসেন্স বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই পাঁচ রকমের জীবন্ত জৈব উপাদান এর মধ্যে পলিস্যাকরাইড্স এবং ট্রাইটারপেনয়েড্স সর্বাপেক্ষা কার্যকারী বলে প্রতিয়মান হয়েছে এবং এই দুই বায়ো একটিভ উপাদান পরিমানে আধিক্যের কারনে দেহের প্রায় সব রকমের রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে। এই পাঁচ প্রকার জৈব উপাদান ছাড়াও এর মধ্যে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান হিসাবে আছে নিউক্লিয়োসাইড্স, নিউক্লিয়োটাইড্স, আরএনএ প্রোটিন, খাদ্য উপযোগী আঁশ, এনজাইম, অ্যালকালয়েড্স, ভিটামিন, এসেনসিয়াল এমাইনো এসিড, ষ্টেরল এবং ফ্যাটি এসিড।
বর্নিত জৈব উপাদানগুলিকে নিয়ে গবেষণা করে দেখা গেছে শরীরের বিভিন্ন অন্ত্র এবং তন্ত্রগুলিকে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে ।
মানব দেহের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে গ্যানোডার্মার উপকারীতা বা কার্যকারীতা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো-

স্নায়ু : 

স্নায়ুর উপর কাজ করে বলে গ্যানোডার্মা মানুষের স্বাভাবিক ঘুমের নিশ্চয়তা দেয়। জাপানে অনিদ্রা রোগীদের গ্যানোডার্মা দেওয়া হয়। কয়েকমাস এই মাশরুমের নির্যাস নিয়মিত খেলে ঘুম আসে এবং অনীদ্রা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। দেহে স্নায়ু সংক্রান্ত বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে মানুষ অনিদ্রার শিকার হয়। তাছাড়া বিশৃঙ্খলিত স্নায়ু মানুষের শরীরে নানান ধরনের রোগের উপসর্গ দেখা দেয় যেমন-মাংসপেশীর দুর্বলতা, দুশ্চিন্তা এবং নিয়মিত অসুস্থতা। জাপান এবং চায়নার বনজ ঔষধি সম্বন্ধীয় ডাক্তারগণ ব্যপকভাবে স্নায়ু রোগীদের গ্যানোডার্মা মাশরুম পাউডার দিয়ে অভুত ফল পেয়েছে। এছাড়া স্মৃতিশক্তি হারান রোগী গ্যানো ব্যবহারে দেখা গেছে তাদের স্মৃতিশক্তি অনেকটা ফিরে আসে। গ্যানো ব্যবহারে এও প্রমানিত হয়েছে যে শরীরের ব্যাথা বেদনা উপশম হয়। গ্যানোডার্মা চার মাস নিয়মিত গ্রহণ করলে যে কোন লোক বিষাদগ্রস্ততা থেকে মুক্ত হতে পারে। নিয়মিত গ্যানোডার্মা সেবন করলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি হয় এবং বয়োবৃদ্ধিকালে অ্যালঝেইমার রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।

জাপানের টয়োমা শহরের ঔষধ গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিশ্চিত করেছে পলিস্যাকরাইড্স সর্ব রোগের ঔষধ। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং তারা আরও দেখেছে একটা নির্দিষ্ট কৌশলে হাড়ের ভিতরকার মজ্জায়  বি-সেল্ উৎপাদন করে ঠিক সেই রকম অন্য কোন কৌশলে স্মৃতি বৃদ্ধির জন্য টি-সেল্  নামক এক উপাদান তৈরি করে মস্তিষ্কে টক্সিন নিষ্ক্রীয় করে যার ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। দেহের সমস্ত অর্গান, রক্ত মাংসপেশীর কোষ এবং স্নায়ুতন্ত্র গুলি সুস্থ এবং টক্সিন মুক্ত থাকলেই কেবল মস্তিষ্কেও কার্যক্রম সাবলিল থাকবে এবং স্মৃতি শক্তি বাড়তে পারে।

অকাল বার্ধক্যরোধ

পলিস্যাকরাইড্স এক জৈব উপাদান সমৃদ্ধ বলে গ্যানোডার্মা মাশরুম অনাক্রম্যতাকে সুবিন্যস্ত করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। জীবন শক্তির উন্নতি করে। স্বাস্থ্যের পুষ্টি সাধন করে। এছাড়াও গ্যানোডার্মা দেহের মেটাবলিজম এর ভারসাম্য রক্ষা করে দৈনন্দিন সৃষ্ট নানা ধরনের ক্ষতিকর জৈব মেটাবোলাইটস কে নিষ্ক্র্রীয় করে এসিড এবং মুক্ত অক্সিজেন রেডিকেল্স হতে শরীরকে রক্ষা করে। পলিস্যাকরাইড্স মাংস কোষের ডি.এন.এ রক্ষা করে এবং এটার ধবংস প্রক্রিয়া ধীরগতি করে। ফলে গ্যানোডার্মা সেবনে অকাল বার্ধক্যরোধ হয় এবং যৌবনের চাঞ্চল্য ফিরে আসে।

হৃদরোগ থেকে সুরক্ষা : 

জাপান এবং চায়নার বিজ্ঞানীগণ পরীক্ষা করে জানতে পেরেছে গ্যানোডার্মা লুসিডিয়াম মাশরুমে আছে গ্যানোডোরিক এসিড যা দেহের রক্ত চলাচলকে নির্বিঘ করে এবং কোলেষ্ট্ররেল কমাতে সাহায্য করে। হার্ট এর কার্যক্রম সাবলিল রাখে ফলে হার্টকে রোগমুক্ত রাখে। এছাড়া হার্টের রক্তনালীতে চর্বি জমতে বাধা দেয়, যে কারনে হার্টএটাক এবং ষ্ট্রোকের ঝুকি কমিয়ে গ্যানোডার্মা সুস্থ্য দীর্ঘ জীবন নিশ্চিত করে।

গ্যানোডার্মা উচ্চ রক্তচাপ কমায়:

১৯৭২ সালে চায়না এবং ১৯৮৮ সালে জাপানের গবেষক দল গবেষণা করে দেখতে পেয়েছেন নিয়মিত গ্যানোডার্মার নির্যাস গ্রহণ করলে রক্তে চাপ এবং লিপিড স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে। গ্যানোডার্মায় বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের জৈব উপাদানের মধ্যে ট্রাইটারপেনয়েড্স নামক জৈব পদার্থ শরীরের রক্ত চাপ, রক্ত সঞ্চালন এবং রক্তে লিপিড স্বাভাবিক মাত্রায় রাখার ক্ষমতা সম্পন্ন বলে প্রমানীত। এ পর্যন্ত ১০০ রকমের ট্রাইটারপেনয়েড্স গ্যানোডার্মায় পাওয়া গেছে যার মধ্য থেকে ৮ প্রকার ট্রাইটারপেনয়েড্স নিশ্চিত রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা রাখে বলে বিজ্ঞানী মহল প্রমান করেছেন।

ক্যানসার থেকে সুরক্ষা:

জাপান এবং আমেরিকার বিজ্ঞানী দ্বারা এটা প্রমাণিত যে গ্যানোডার্মা টিউমার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা আছে। কোরিয়া এবং চায়নার এক গবেষক দল গ্যানোডার্মাতে বিটা-ডি-গ্লুক্যান সনাক্ত করেন। এটা অনেকগুলি চিনির অনু দ্বারা গঠিত যৌগ উপাদান যার কাজই হচ্ছে দেহে অ্যান্টি বডি তৈরী করা, ফলে দেহে কোন কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি হতে পারে না, এভাবে গ্যানোডার্মা দেহকে ক্যানসার হতে রক্ষা করে।

এলার্জি থেকে প্রতিরোধ:

১৯৭০ হতে ১৯৮০ সালে জাপান এবং চায়নায় এলার্জির উপর ব্যপক গবেষণা চালান হয়। গ্যানোডার্মার নির্যাস বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে এতে এলার্জির দমন করার অপূর্ব ক্ষমতা সম্পন্ন উপাদান আছে যা এজমা নিশ্চিতভাবে নিয়ন্ত্রন করে। ১৯৯০ সালে আমেরিকার গবেষকরা গবেষণায় দেখতে পেয়েছেন গ্যানোডার্মায় কোন রকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ছাড়া শক্ত হয়ে যাওয়া গলা এবং ঘাড়ের পেশী সমুহ নমনীয় করার ঔষধি উপাদান আছে । এছাড়া শ্বাস যন্ত্রে যে কোন ধরনের অসুখ, বাত রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে গ্যানোডার্মার।

লিভার সুরক্ষা:

লিভারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষগুলি ক্ষতি হয়ে গেলে এর কার্যকারীতা অনেক কমে যায় যার ফলে শরীরের সমস্ত অংশের রাসায়নিক ক্রিয়ার সামঞ্জস্য থাকে না। ফলে দেহে অনেক রকমের রোগ দেখা দেয়। গ্যানোডার্মা মাশরুম শরীরকে রাসায়নিক এবং জীবনু বিষয়ক ক্ষতিকর ক্রিয়া থেকে সুরক্ষা করে রাখে। বর্তমান সময়ে চীন এবং জাপানে লিভারের যে কোন সমস্যার জন্য গ্যানোডার্মা ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে লিভারের কর্মক্ষমতা একেবারে ক্ষয়িভুত হয়ে আসলেও গ্যানোডার্মা নির্যাস নিয়মিত দিনে দুইবার সেবন করলে লিভার নিজেই নিজেকে সারিয়ে তোলে।

কিডনী সুরক্ষা:

কিডনী রোগ সারতে অনেক বেগ পেতে হয়। একবার কিডনীর কার্যক্ষমতা কমে গেলে বা বাধাগ্রস্ত  হলে দেহে নানা রকম উপসর্গ দেখা দেয় যেমন-দেহে পানি জমা, রক্তে কোলেষ্ট্ররেল বেড়ে যাওয়া, রক্তে চিনির পরিমান বেড়ে যাওয়া। নিয়মিত গ্যানোডার্মার নির্যাস পান করলে দুর্বল কিডনী সবল হয় এবং এর কার্যক্ষমতা আবার ফিরে আসে।

ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি রোধ:

গ্যানোডার্মা মাশরুমের নির্যাস ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে। এক গবেষণায় বিজ্ঞানীগণ দেখেছেন ৪৮ ঘন্টা পূর্বে একটি ইদুঁরকে গ্যানোডার্মার নির্যাস খাওয়ান হয়। এর পর ই-কলি জীবানু ইনজেকশন দেওয়া হলে ইদুঁরের কোন ক্ষতি হয় নাই। পরবর্তী  একের পর এক পরীক্ষায় দেখা গেছে গ্যানোডার্মার নির্যাস খাওয়া ছাড়া প্রতিটি ইদুঁর ই-কলি ইনজেকশন দেওয়া হলে মারা গেছে পক্ষান্ডরে গ্যানো নির্যাস খাওয়ান হলে ৬০-৮৫% ইদুঁর ই-কলি হতে বেঁচে যায়। সম্প্রতি এইড্স রোগ (এইচ আই ভি ) দমনে গ্যানোডার্মা ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। গ্যানোডার্মা সেবনে এইড্স রোগী কমপক্ষে আরো ১০ বৎসর টিকে যেতে পারে। 

বিজ্ঞানীদের মতে পলিস্যাকরাইড্স গ্যানোডার্মার একটা প্রধান উপাদান যা দেহকে যে কোন অবস্থায় সংক্রমন মুক্ত রাখতে সক্ষম। আরও গবেষণায় দেখা গেছে গ্যানো নির্যাস হাড়ের মধ্যকার মজ্জায় আর.এন.এ এবং ডি.এন.এ প্রায় ৫০% বাড়ায় এবং এর আমিষের উপাদান ২৮% বৃদ্ধি হয়। এই বৃদ্ধির কারনে রক্তে বি-সেল নামক একটি উপাদান তৈরি হয় যা কিনা পরবর্তীতে এন্টিবডিতে রূপান্তরিত হয়। এই এন্টিবডি দেহকে সমস্ত রকমের ক্ষতিকর জীবাণু থেকে রক্ষা করে যাকে রোগ প্রতিরোধ বর্ম বলা হয়। গ্যানো নির্যাস হাড়ে মজ্জায় রক্তের হিমোগ্লোবিন উৎপাদন শক্তিশালী করে এবং এন্টিবডি তৈরি করে ঘনঘন জীবানুগঠিত আক্রমন থেকে দেহকে রক্ষা করে।

জাপান সরকার ক্যান্সার নিরাময়ের ঔষধ হিসাবে গ্যানোডার্মাতে ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে:
যে কোন ঔষধি বনজ ও ফলজ দ্রব্য রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রাখে তাদের বিষয়ে গবেষকরা একটু বেশী পরিমান মনোযোগী হয়ে আরও পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে চায় আর কোন উপকারী উপাদান পাওয়া যায় কিনা। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় গ্যানোডার্মা নিয়ে গবেষণার ফলাফলের উপর ভিত্তি করে এটাকে ক্যানসার এর ঔষধ হিসাবে জাপান সরকার অনুমোদন দেওয়াকে ইতিবাচক ক্যনসার নিয়ামক ঔষধ হিসাবে ধরা হচ্ছে। গবেষণায় আরও তথ্য পাওয়া গেছে গ্যানোডার্মা ভিটামিন সি এর সঙ্গে গ্রহণ করলে গ্যানোডার্মার কার্যকারীতা বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয়। বিখ্যাত হারবালিক্টদের অভিমত গ্যানোডার্মার নির্যাস ভিটামিন সি সহকারে গ্রহণ করলে রোগের উপর অত্যাধিক কার্যকরী হয়ে থাকে।

গ্যানোডার্মা রক্তে চর্বির মাত্রা এবং কোলেষ্টরেল কমায়:

৭০ জন রোগী যাদের রক্তে উচ্চ কোলেষ্টরেল এবং ভারসাম্যহীন লিপিড তাদেরকে চায়নার এক হাসপাতালে গ্যানোডার্মার নির্যাস এক নাগাড়ে চার মাস খাওয়ার পর দেখা গেল প্রত্যেকটা রোগীর রক্তে কোলেষ্টরেলের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ঐসব রোগীদের বয়স ৩০ বৎসরের উপরে ছিল। এখানে উল্লেখ্য যে ঐ সব রোগী কোন রকম খাবারের মেনু না বদলিয়ে গ্যানোডার্মা সেবন করেছিল। এর মধ্যে যারা প্রাণীজ আমিষ বর্জন করেছিল তাদের উন্নতি হয়েছিল সর্বোচ্চ। 


পরিশেষে একটা প্রশ্ন থেকে যায় কেন মানুষের এত রোগ হয় যা কিনা প্রাণী জগতের আর কোন প্রজাতির হয় না। কারণ অনুসন্ধানে দেখা গেছে প্রাণী জগতে মানুষ ছাড়া আর কোন প্রাণী নানা প্রকার খাদ্য এক সঙ্গে খায় না। যেমন বলা যায় মাংসাশী প্রাণী শুধু মাংস খায় আর নিরামিষাশী প্রাণীরা শুধু বৃক্ষ থেকে আরোহিত খাবার খায়। যার কারনে তাদের হজম প্রক্রিয়ার কোন বিঘ ঘটে না এবং  জীবদ্দশ্যায় জীবাণু জনিত রোগ ছাড়া বলা যায় তারা নিরোগ থাকে। কিন্তু মানুষের বেলায় তার উল্টোটা ঘটে। এমন কোন মানুষ পাওয়া যাবে না যে জীবনভর নিরোগ থাকে। মানুষের রোগের তালিকা অনেক বড় এবং নতুন নতুন সৃষ্ট রোগ এর তালিকা দিনদিন সমৃদ্ধ করে চলেছে। শরীরে এক বা একাধিক রোগ সৃষ্টির অনেক কারণ থাকতে পারে তবে অন্য প্রাণীর সঙ্গে মানুষের মূল পার্থক্য খাবারের বিচিত্র ধরন শ্রেণী এবং রকমের। যেখানে অন্য প্রাণী এক ধরনের খাবার খায় সেখানে মানুষ একবারে বিভিন্ন ধরনের খাবার এক সঙ্গে খেয়ে থাকে যেমন-শাক সবজি, মাছ, মাংস, ডাল, ভাত, মিষ্টান্ন কনফেকশনারী এবং হোটেলের তৈরী নানা রকম মুখরোচক খাদ্য ইত্যাদি। এটাই হয়ত একমাত্র কারণ বিভিন্ন প্রকার খাদ্য এক সঙ্গে খেলে হজমের ব্যাঘাত ঘটে এবং ঠিকমত হজম হয় না ফলে শরীরে টক্সিনের সৃষ্টি হয়।  আমরা যদি খাবার মেনুতে নানা রকম খাদ্যের সমারোহ না করে অন্য প্রাণী জগতের জীবদের মত সীমিত পদের খাবার মেনুতে সীমাবদ্ধ রেখে খাই এবং নিয়মিত গ্যানোডার্মার চা খাই তবে দেহে রোগ থাকলে সেরে যাবে এবং নীরোগ থাকলে কোন দিন কোন রোগে আক্রান্ত হবে না বলে নিশ্চিত করা যায়।   

দেহের টক্সিন শুদ্ধিকরণ:

নানা রকম ঔষধ যেমন-এন্টিবায়েটিক বেদনা নাশক ঔষধ, নানা রকম প্রোটিনজাত খাদ্য এবং ভাজা পোড়া খাওয়ার ফলে শরীরের অনেক টক্সিন জমে যায়। গ্যানোডার্মা নির্যাস খেলে দেহ টক্সিনমুক্ত হয় এবং শরীরের রাসায়নিক ভারসাম্য রক্ষা হয়। দেহের জৈবনিক ক্রিয়া বাড়িয়ে দেয় এবং রক্তে অক্সিজেন শোষণ করার ক্ষমতা দেড় গুণ বাড়িয়ে দেয়।

পাকস্থলীতে খাদ্য পরিপাকের পর সৃষ্ট বর্জ হতে উৎপন্ন টক্সিন মাংস পেশীর কোষের কার্যকারীতা নষ্ট করতে পারে। প্রতিটি মাংসের কোষ শরীরের জন্য কর্মশক্তি উৎপাদন করার এক একটি অতি ক্ষুদ্র কারখানা। খাদ্যের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় এবং পরিমান মত ভিটামিন, মিনারেল এবং এমাইনো এসিড সরবরাহ থাকলেই কেবল কোষের শক্তি উৎপাদনের কারখানা সম্পূর্ন সচল থাকে। শরীরে যত বেশী পরিমান টক্সিন (ক্ষতিকর রাসায়নিক) জমবে তত বেশী নানা ধরনের রোগের উপসর্গ দেখা দেবে। এই সব উপসর্গের তালিকা অনেক বড়। একমাত্র ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগ ছাড়া মানুষ যত রকম রোগে আক্রান্ত হয় সেগুলির মূলে থাকে একটাই রোগ আর তা হল দূষিত রক্ত এবং ধীর গতি সম্পন্ন রক্ত প্রবাহ।


দূষিত রক্ত এবং রোগের সমীকরণ এই রকম:

দূষিত রক্ত = ধীর গতি সম্পন্ন রক্ত প্রবাহ = নানা রোগের সৃষ্টি
বিশুদ্ধ রক্ত = সাবলিল রক্ত প্রবাহ = নীরোগ দেহ


  • দেহে টক্সিন জমলে নিম্নে বর্নিত রোগের উপসর্গ দেখা দিতে পারে।
  • শরীরের উদ্যাম এবং মনের উল্লাস কমে যাওয়া 
  • ওজন বেড়ে যাওয়া
  • বমনেচ্ছু বা বমি করা
  • মাথা ধরা
  • মাথা ঘোরা / ঘুর্নিত মস্তক।
  • কানের মধ্যে শব্দ করা
  • অতিরিক্ত ঘাম বের হওয়া
  • ঠান্ডায় কাপুনি হওয়া
  • জ্বর এবং কাশি হওয়া
  • পেটের অসুখ / উদরাময়
  • অস্থির ভাব হওয়া
  • কোষ্ঠ কাঠিন্য
  • ঘন ঘন ঠান্ডা লাগার প্রবনতা
  • চুল পড়ে যাওয়া
  • স্নায়ুর দুর্বলতা
  • হজমে সমস্যা
  • ক্যান্সার 
  • স্থায়ীভাবে পায়ের রক্তবাহী রগ স্ফীত হওয়া
  • কোন কোন খাদ্য খেলে এলার্জি হওয়া
  • গন্ধযুক্ত নি:শ্বাস
  • চামড়ার উপর শুকনা ঘা হওয়া
  • সব সময় নাক চুলকানি 
  • ডায়াবেটিক
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া
  • অনিদ্রা
  • অত্যন্ত ক্লান্তি বোধ করা
  • বিশৃঙ্খল অবস্থা, ধৈর্যচ্যুতির অবস্থা হওয়া
  • হঠাৎ স্নায়ুবিক উত্তেজনা
  • নি¤œ রক্ত চাপ
  • দূর্বল রক্ত সঞ্চালন
  • নাড়ির স্পন্দন বেড়ে যাওয়া
  • বিনা কারনে হাত কাপা
  • মাঝে মাঝে খিচুনি হওয়া
  • যে কোন কাজ করার বাতিক
  • মতিভ্রম হওয়া
  • হঠাৎ দৈহিক অবসন্নতা
  • রোগ জনিত কারনে গভীর নিদ্রা চলে যাওয়া
  • পায়ে অথবা তলপেটে চর্বি জমে গুটলির মত হওয়া
  • গিরায় গিরায় ব্যাথা
  • গলা ব্যাথা
  • পুরুষত্বহীন হয়ে যাওয়া
  • পিট এবং মাজায় ব্যাথা
  • আঙ্গুলে নখ ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া
  • অর্শ থেকে রক্ত পড়া
  • নাক দিয়ে পানি ঝরা
  • উচ্চ রক্তচাপ
দেখা গেছে মানুষের রোগ বলতে একটাই-সেটা ”দূষিত এবং ধীর গতি সম্পন্ন রক্ত প্রবাহ” অথচ এর বহি:প্রকাশ উপরে বর্নিত উপসর্গগুলি। আসল এবং প্রধান রোগটাকে উপেক্ষা করে যে কোন একটা উপসর্গ দেখা দিলেই আমরা সাধারনত  ঔষধ খাই। এতে রোগের উপসর্গ কমে যায়। আসল রোগ দূষিত ধীর গতি সম্পন্ন রক্ত প্রবাহ যদি বিদ্যমান থাকে তবে ঐ একই উপসর্গ নয়ত অন্য আর একটা নতুন উপসর্গ আবার দেখা দিতে পারে। এই দুষ্ট গ্রহ থেকে মুক্ত হয়ে নিরোগ দেহের অধিকারী হতে হলে দেহকে টক্সিন বা বিষ মুক্ত করতেই হবে। এই (বিষ) টক্সিন মুক্ত করার ক্ষেত্রে গ্যানোডার্মা লুসিডিয়াম মাশরুমের নির্যাস একটা বিরাট ভুমিকা রাখতে পারে। শুধু দেহকে কেবল বিষমুক্ত করাই নয় এই মাশরুম অনেক কঠিন রোগের প্রতিষেধক এবং ঔষধ হিসাবে পৃথিবীর বহু দেশে স্বীকৃতি পেয়েছে ও সমাদৃত হয়েছে।

গ্যানোডার্মা মাশরুমের বহুমাত্রিক উপকার পেতে হলে এর নির্যাস পান করার পূর্বে শরীরকে নি¤œবর্নিত প্রক্রিয়ায় টক্সিন মুক্ত করে নিতে হবে।

টক্সিন মুক্ত করার নিয়ম:

দুই চা চামচ - লেবুর রস
দুই চা চামচ - মধু (ডায়াবেটিস এর ক্ষেত্রে মধু মেশান যাবে না)
বিশ ভাগের এক ভাগ চা চামচ- লাল মরিচের পাউডার
২০০ এম এল  হালকা গরম পানি মিশ্রিত করে লেমনেড তৈয়ার করতে হবে। এই লেমনেড দিনে ৮ বার প্রতি দুই ঘন্টা পর পর খালি পেটে সকাল ৬ টা থেকে শুরু করে রাত ৮ টা পর্যন্ত এক গ্লাস করে পান করতে হবে।

এটা ছাড়া সারাদিন কিছু খাওয়া যাবে না। এইভাবে দুই দিন বা ৪৮ ঘন্টা উপবাস করতে হবে। এরপর দুইদিন শুধু টক জাতীয় ফল যেমন-মাল্টা, আনারস, আপেল, পেয়ারা, জামবুরা ইত্যাদি খেয়ে থাকতে হবে। এই চার দিনে আপনার দেহ প্রায় টক্সিনমুক্ত হয়ে যাবে। এরপর স্বাভাবিক খাবার খাবেন এবং দিনে দুই বার গ্যানো নির্যাস পান করবেন। আপনার শরীর থেকে সব রোগ চলে যাবে যা আর কখনও ফিরে আসবে না।

বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ঔষধ হিসেবে গ্যানোডার্মার ব্যবহার

রোগের নাম : এলার্জি

লক্ষণ : ঘরের ধূলা এবং মুরগীর পালক থেকে আসা কোন ক্ষুদ্র কণা

প্রতিক্রিয়া : শরীর চুলকান, সর্দি শরীরের জায়গায় ফুলে ওঠা।

গ্যানোডার্মার চিকিৎসা : গ্যানোডার্মা এড্রিনাল গ্রন্থিকে উৎজীবিত করে এর নি:সৃত রস এলার্জিকে দমন করে।

রোগের নাম : এনেমিয়া,রক্তে লোহিত কনিকার স্বল্পতা।

লক্ষণ :ফেকাসে এবং হাত পা ঠান্ডা। ঘন ঘন মাথা ব্যাথা করা, শরীর দূর্বল বোধ করা।

প্রতিক্রিয়া : অবসন্ন এবং মাথা ঘুরা

গ্যানোডার্মার চিকিৎসা : গ্যানোডার্মা যার মধ্যে অর্গানিক জারমানিয়াম নামক একটি উপাদান হাড়ের মজ্জাকে রাসায়নিকভাবে উৎজীবিত করে এবং নতুন রক্ত কনিকা সৃষ্টি করে যা রক্তে অক্সিজেন বহন করে। দিনে দুইবার গ্যানো নির্যাস খেলে এনেমিয়া রোগ সেরে যায়।

রোগের নাম : এজমা

লক্ষণ : কফ বের হওয়া , বুকে ব্যাথা অনুভব, বুকের বা দিকে চাপ অনুভব করা, বুকে গড়গড় আওয়াজ হওয়া, গলা শুকিয়ে যাওয়া এবং দুর্বল বোধ করা।

প্রতিক্রিয়া : ২-৩ দিন শ্বাস কষ্ট থাকা এবং কষ্টকরভাবে কফ বের হওয়া

গ্যানোডার্মার চিকিৎসা : গ্যানো নির্যাস সংক্রামক রোগের বিষ মুক্ত করে এবং ফুসফুসের কোষগুলিকে শিথিল করে রোগের প্রকোপতা কমিয়ে দেয়।

রোগের নাম : মুত্রের সঙ্গে রক্ত যাওয়া

লক্ষণ : মুত্র ত্যাগ করার সময় ব্যাথা অনুভব হওয়া

প্রতিক্রিয়া : সব সময় মুত্র ত্যাগ ব্যাথা বেড়ে যাওয়া

গ্যানোডার্মার চিকিৎসা : গ্যানোডার্মায় বিদ্যমান পলিস্যাকরাইড শরীরে এন্টিবডি সৃষ্টি করে যা মুত্রনালীতে ব্যাকটেরিয়া ধবংস করে আরোগ্য করে।

রোগের নাম : কোষ্ঠকাঠিন্য।

লক্ষণ : সপ্তাহে তিন দিন মল ত্যাগ, মল শুকনা এবং শক্ত হওয়া ।

প্রতিক্রিয়া : মল ত্যাগের সময় প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করা ।

গ্যানোডার্মার চিকিৎসা : গ্যানোডার্মার নির্যাস মল ত্যাগের দূর্বল নালীর সক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় ফলে সহজেই মল বেরিয়ে যায়।

রোগের নাম : ডায়াবেটিক ইনসুলিন অভাব জনিত কারনে ডায়াবেটিক হয়ে থাকে ।

লক্ষণ : দূর্বলতা, ক্লান্তি বোধ, ক্ষত আরোগ্য হতে বেশী সময় লাগা, বেশী ক্ষুধা পিপাসা লাগা

প্রতিক্রিয়া : রক্তে চিনির পরিমান বেড়ে যাওয়া হাত এবং পা সামান্য ফুলে যাওয়া।

গ্যানোডার্মার চিকিৎসা : গ্যানোডার্মার নির্যাস লিভারের জমে যাওয়া টক্সিন পরিষ্কার করলে লিভার দ্বারা প্যানক্রিয়াস উজ্জীবিত হয়ে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন নি:সরণ করে রক্তে চিনির মাত্রা কমিয়ে দেয়।


রোগের নাম : গ্যাসট্রাইটিস ডিউডেনাম এবং পাকস্থলীর জটিল অবস্থা সৃষ্টি করে

লক্ষণ : পেটে বিরক্তকর অবস্থা সৃষ্টি করে মাঝে মাঝে পেটে ব্যাথা হবে ঢেকুর উঠলে তিক্ত স্বাস অনুভুত হবে।

প্রতিক্রিয়া : পেট ভারী থাকবে, ব্যাথা বাড়বে, ক্ষিদে বাড়বে।

গ্যানোডার্মার চিকিৎসা : গ্যানোডার্মার নির্যাস তিক্ত ভাবটা কাটিয়ে দেবে হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এসিড নি:সরন কমিয়ে দেবে, দিনে দুইবার খেতে হবে।


রোগের নাম : গেটে বাত অস্বাভাবিক মাত্রায় ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়া এবং গিরায় গিরায় ইউরিক এসিড জমা হওয়া;

লক্ষণ : হাত পায়ের গিরা ফুলাসহ প্রচন্ড ব্যাথা হবে। ফোলা গিরাগুলো হঠাৎ লাল বর্ণ হবে এবং শরীরে তাপ সামান্য বেড়ে যেতে পারে।

প্রতিক্রিয়া : ব্যাথা ও জ্বর বেড়ে যেতে পারে।

গ্যানোডার্মার চিকিৎসা : গ্যানোডার্মার নির্যাসের উপাদান সমূহ ইউরিক এসিড শরীর থেকে বের করে দেবে এবং বাত ও বাতজ্বর কমিয়ে দেবে। দিনে দুইবার খেতে হবে।


রোগের নাম : হৃদরাগ রক্তনালী বন্ধ হওয়ায় হাটফেল করা ব্রেনষ্ট্রোক করা।

লক্ষণ : বুকের বামদিকে ব্যাথা ও চাপ অনুভ’ত হবে। নি:শ্বাস নিতে কষ্ট এবং শরীর থেকে ঘাম বের হতে পারে, অজ্ঞান হওয়ার আশংকা থাকে, চোখে ঝাপসা দেখা দিতে পারে।

প্রতিক্রিয়া : মানসিক চাপ মাথা ঘোরা রক্তচাপ ওঠা নামা।

গ্যানোডার্মার চিকিৎসা : গ্যানোডার্মার একটি উপাদান এডেনোসিন রক্তের জমাট কোলেষ্টরেল এবং চর্বি যা রক্ত নালীকে বন্ধ করে তাদেরকে তরল করে দেয় যেন জমাট বাধতে না পারে।

রোগের নাম : হেপাটাইটিস এ. বি এবং সি লিভার সংক্রান্ত রোগ সাধারনত মদ জাতীয় তরল পদার্থ নিয়মিত খেলে, শরীরে টক্সিন জমলে অথবা কোন ক্ষতিকর ভাইরাস আক্রমন করলে।

লক্ষণ : শারিরীক দুর্বলতা হলুদ মুত্র, অরুচি এবং গিরায় গিরায় ব্যাথ্যা।

প্রতিক্রিয়া : গ্যানোডার্মা খেলে লক্ষন কমতে থাকবে এবং ক্ষুদা বাড়তে থাকবে।

গ্যানোডার্মার চিকিৎসা : গ্যানোডার্মায় বিদ্যমান পলিস্যাকরাইড থাইমাস গ্রন্থিকে উজ্জীবিত করে এক ধরনের হরমোন সৃষ্টি করে যা কিনা যে কোন ভাইরাস আক্রমন রুখে দেওয়ার বিরল ক্ষমতা রাখে।

রোগের নাম : ইনফ্লুয়েঞ্জা ক্ষতিকর ভাইরাস আক্রমনের জন্যে এটা হয়ে থাকে।

লক্ষণ : মিউকাস, হালকা গলা বেদনা, নাক দিয়ে পানি পড়া।

প্রতিক্রিয়া : মিউকাসের পরিমান বেড়ে যাবে।

গ্যানোডার্মার চিকিৎসা : তিক্ত স্বাদের গ্যানো এলার্জির প্রকোপ কমিয়ে দেয় এবং হিসটামিনকে অবরোধ করে দেয়।


রোগের নাম : প্যারালাইসিস

লক্ষণ : মাথা ব্যাথ্যা , এক দিকে অবস হয়ে যাওয়া।

প্রতিক্রিয়া : রক্তনালী একটু ব্যাথ্যা হতে পারে সব সময় ঘুম ঘুম ভাব থাকবে।

গ্যানোডার্মার চিকিৎসা : গ্যানোডার্মার একটি উপাদান অ্যাডনোসিন রক্তে কোলেষ্টরেল কমিয়ে দেবে। রক্তের সঞ্চালন বাড়িয়ে দেবে, রক্তবাহিত শিরায় কোথাও বাধা থাকলে সারিয়ে তুলবে।


রোগের নাম : পাইল্স

লক্ষণ : মলে রক্ত দেখা দেবে। মল ত্যাগের সময় প্রচন্ড ব্যাথ্যা অনুভুত হবে।

প্রতিক্রিয়া : পায়খানা করতে কষ্ট হবে এবং রক্ত দেখা দেবে।

গ্যানোডার্মার চিকিৎসা : গ্যানো তিন সপ্তাহ দিনে দুইবার সেবন করলে পাইলস এর প্রকোপ কমে যাবে।


রোগের নাম : যক্ষা ফুসফুসে ব্যাকটেরিয়া আক্রমন হতে শুরু হয়।

লক্ষণ : রক্ত সমেত কাশি হওয়া, শরীরের ওজন কমে যাওয়া।

প্রতিক্রিয়া : কাশি বাড়তে থাকে।

গ্যানোডার্মার চিকিৎসা : গ্যানোডার্মার নির্যাস ফুসফুসের ভাইরাস জনিত ক্ষত থেকে রক্ষা করে।


রোগের নাম : কিডনী সমস্যা

লক্ষণ : সমস্ত শরীর ক্লান্ত বোধ করা মলিন দেখাবে হাত ও পা ফুলে যাবে সকালে পায়ের তলায় ব্যাথা অনুভূত হবে।

প্রতিক্রিয়া : ঘন ঘন মুত্রের চাপ আসবে কিডনীতে ব্যাথা অনুভূত হবে, গাল, হাত, পায়ে পানি জমে সামান্য ফোলা দেখাবে।

গ্যানোডার্মার চিকিৎসা : গ্যানোডার্মার উপাদান পলিস্যাকরাইড শরীরের এন্টিবডি সৃষ্টি করে কিডনীর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধবংস করে মুত্রের সঙ্গে প্রোটিন বের হওয়া বন্ধ করবে।

রোগের নাম : ব্রন / ফুসকুড়ি

লক্ষণ : গালে ছোট ফোড়া জনিত দাগ হওয়া।

প্রতিক্রিয়া : ছোট দানাগুলি থেকে পুজ বের হওয়া।

গ্যানোডার্মার চিকিৎসা : গ্যানোডার্মা শরীরের সৃষ্ট টক্সিন পরিষ্কার করে লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় ফলে শরীরের নানারকম হরমোন নি:সরনে সমতা এনে দেয় ফলে ধীরে ধীরে চামড়ার দাগ দূর হয়ে যায়।
এছাড়া চামড়ায় যে কোন সমস্যায় গ্যানো নির্যাস মাখিয়ে ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেললে উপকার পাওয়া যায়। কোথাও সামান্য কেটে গেলে গ্যানো নির্যাস রক্ত ঝরা বন্ধ করার ক্ষমতা রাখে।


Reference:

1.      T. Tasaka, M. Mio, K. Izushi et al., “Anti-allergic constituents in the culture medium of Ganoderma lucidum. II. The inhibitory effect of cyclooctasulpher (sic) on histamine release”, Agents and Actions (1988), 23(3/4): 157-160.

2.      “Lingzhi.” Pharmacology and applications of Chinese Materia Media, I. Hson-Mou Chang, Ph.D. and Paul Pui-Hay But, editors. World Scientific Publishing Co. Pte Ltd., Singapore, 1986; 642-653.

3.      Sigeo Ukai, Tadashi Kiho, Chihiro Hara et al., “Polysaccharides in Fungi. XIV. Anti-inflammatory Effect of the Polysaccharides from the Fruit Bodies of Several Fungi,” Journal of Pharmacobio-Dynamics (1983); 6(12): 983-990.

4.      Hitoshi Ito, Sensuke Naruse and Keishiro Shimura, “Studies on Antitumor Activity of Basidiomycete Polysaccharides. VII. Antitumor Effect of the Polysaccharide Preparations from Ganoderma lucidum of Mouse Sarcoma 180,” Mie Medical Journal (1977); 26(2/3): 147-152.

5.      Toshio Miyazaki and Motohiro Nishijima, “Studies of Fungal Polysaccharides. XXVII. Structural Examination of a Water-Soluble, Anitumor Polysaccharide of Ganoderma lucidum,” Chemical and Pharmaceutical Bulletin (1981); 29 (12): 3611-3616.

6.      Yasuo Komoda, Masato Shimizu, Yoshiko Sonoda and Yoshihiro Sato, “Ganoderic Acid and its Derivatives as Cholesterol Synthesis Inhibitors,” Chemical and Pharmaceutical Bulletin (1989); 37(2): 531-533.

7.      T. Tasaka, M. Akagi, K. Miyoshi et al., “Anti-allergic constituents in the culture medium of Ganoderma lucidum. (I). Inhibitory effect of oleic acid on histaminerelease,” Agents and Actions (1988); 23(3/4): 153-156.